সাউন্ড বার
আপনি কি আপনার টিভির সাউন্ড নিয়ে হতাশ? সিনেমা দেখার সময় ডায়লগগুলো শুনতে সমস্যা হয়, নাকি গেম খেলার সময় অ্যাকশনগুলো তেমন জমে না? তাহলে আপনার জন্য সাউন্ড বার হতে পারে দারুণ একটা সমাধান! এই ব্লগ পোষ্টে আমরা সাউন্ড বার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যাতে আপনি আপনার টিভির সাউন্ড সিস্টেমকে সহজেই আপগ্রেড করতে পারেন।
সাউন্ড বার: আপনার টিভির সাউন্ড সিস্টেমকে আপগ্রেড করার সহজ উপায়
আজকাল প্রায় সবার ঘরেই টিভি আছে, কিন্তু টিভির সাথে যে সাউন্ড সিস্টেমটা থাকে, সেটা খুব একটা ভালো হয় না। তাই আপনি যদি আপনার টিভির সাউন্ড আরও ভালো করতে চান, তাহলে সাউন্ড বার একটা দারুণ অপশন। সাউন্ড বার কি, কেন এটা এত জনপ্রিয়, এবং কিভাবে এটা আপনার টিভির সাউন্ড কোয়ালিটি বাড়াতে পারে, সেই সবকিছুই আমরা এই ব্লগ পোষ্টে আলোচনা করব। তাই, সাউন্ড বার সম্পর্কে সবকিছু জানতে আমাদের সাথেই থাকুন!
১. সাউন্ড বার কি এবং কেন আপনার এটা দরকার?
সাউন্ড বার হলো একটা লম্বা স্পিকার, যেটা টিভির নিচে বা উপরে বসানো হয়। এটা আপনার টিভির সাউন্ড কোয়ালিটিকে অনেক বাড়িয়ে দেয়।
১.১ সাউন্ড বার: এক নজরে
সাউন্ড বার কিভাবে কাজ করে, সেটা একটু বুঝিয়ে বলি। টিভির থেকে অডিও সিগন্যাল নিয়ে সাউন্ড বার সেটাকে আরও শক্তিশালী করে এবং ছড়িয়ে দেয়। ফলে আপনি অনেক পরিষ্কার এবং ভালো সাউন্ড শুনতে পান। এটা দেখতে সাধারণত লম্বাটে হয় এবং খুব সহজেই টিভির সামনে বা দেওয়ালে বসানো যায়। একটা সাউন্ড বার আপনার ঘরকে একটা ছোটখাটো সিনেমা হল বানিয়ে দিতে পারে, যেখানে আপনি মুভি দেখা বা গান শোনার সময় দারুণ একটা অভিজ্ঞতা পাবেন।
১.২ কেন আপনার একটা সাউন্ড বার দরকার?
টিভির স্পিকারগুলো সাধারণত খুব ছোট হয় এবং সেগুলোর সাউন্ড কোয়ালিটি খুব একটা ভালো হয় না। বিশেষ করে যখন আপনি সিনেমা দেখেন বা গেম খেলেন, তখন ভালো সাউন্ড না পেলে মজাটাই মাটি হয়ে যায়। সাউন্ড বার এই সমস্যাটা সমাধান করে। এটা সাউন্ড কোয়ালিটি অনেক বাড়িয়ে দেয়, ফলে আপনি প্রতিটি শব্দ পরিষ্কারভাবে শুনতে পান। নিচে একটা টেবিল দেওয়া হলো, যেখানে টিভির স্পিকার আর সাউন্ড বারের মধ্যেকার কিছু পার্থক্য তুলে ধরা হলো:
বৈশিষ্ট্য | টিভির স্পিকার | সাউন্ড বার |
---|---|---|
সাউন্ড কোয়ালিটি | দুর্বল | অনেক ভালো এবং পরিষ্কার |
ব্যাস (Bass) | কম | অনেক বেশি |
ডিজাইন | টিভির সাথে যুক্ত | আলাদা করে বসানো যায় |
দাম | টিভির দামের সাথে অন্তর্ভুক্ত | আলাদা করে কিনতে হয় |
১.৩ বাস্তব উদাহরণ
ধরুন, আপনি "হাওয়া" মুভিটা দেখছেন। টিভির স্পিকারে হয়তো সংলাপগুলো ঠিকমতো শোনা যাচ্ছে না, সাউন্ডটাও কেমন যেন দুর্বল লাগছে। কিন্তু যদি আপনি সাউন্ড বার ব্যবহার করেন, তাহলে প্রত্যেকটা সংলাপ স্পষ্ট শোনা যাবে, সাউন্ডের ডিটেইলসগুলোও ভালোভাবে টের পাওয়া যাবে, আর পুরো মুভি দেখার অভিজ্ঞতাটাই বদলে যাবে।
আবার, আপনি যদি কল অফ ডিউটি (Call of Duty) বা ফিফা (FIFA) এর মতো গেম খেলেন, তাহলে সাউন্ড বার আপনাকে আরও বেশি মজা দেবে। গেমের সাউন্ড ইফেক্টগুলো যেমন – বন্দুকের আওয়াজ, গাড়ির স্পিড, বা দর্শকদের চিৎকার – সবকিছু আপনি আরও ভালোভাবে অনুভব করতে পারবেন।
২. বিভিন্ন ধরনের সাউন্ড বার এবং তাদের বৈশিষ্ট্য
বাজারে বিভিন্ন ধরনের সাউন্ড বার পাওয়া যায়, যেগুলোর আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি যে কোন একটা বেছে নিতে পারেন।
২.১ ২.০, ২.১, ৩.১, ৫.১ চ্যানেলের সাউন্ড বার
এই চ্যানেলগুলো আসলে কি বোঝায়? সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এগুলো হলো সাউন্ড বারের স্পিকারের সংখ্যা। 2.0 মানে হলো দুটো স্পিকার (ডান এবং বাম), 2.1 মানে দুটো স্পিকারের সাথে একটা সাবউফার (bass-এর জন্য), 3.1 মানে তিনটা স্পিকার এবং একটা সাবউফার, আর 5.1 মানে পাঁচটা স্পিকার এবং একটা সাবউফার।
- ছোট ঘরের জন্য: 2.0 বা 2.1 চ্যানেলের সাউন্ড বার ভালো।
- বড় ঘরের জন্য: 5.1 চ্যানেলের সাউন্ড বার পারফেক্ট।
২.২ ডলবি অ্যাটমস (Dolby Atmos) সাউন্ড বার
ডলবি অ্যাটমস হলো একটা সাউন্ড টেকনোলজি, যেটা আপনাকে সিনেমাহলের মতো সাউন্ড দেয়। এটা সাউন্ডকে আপনার চারদিকে ছড়িয়ে দেয়, ফলে আপনি মনে করেন যেন আপনি সত্যিই সেই ঘটনার মধ্যে আছেন। ডলবি অ্যাটমস সাউন্ড বারের সুবিধা হলো এটা আপনাকে অসাধারণ সাউন্ড কোয়ালিটি দেবে, কিন্তু এর দাম একটু বেশি।
২.৩ স্মার্ট সাউন্ড বার
স্মার্ট সাউন্ড বারগুলোতে ভয়েস কন্ট্রোল (Voice control) এর সুবিধা থাকে। মানে আপনি শুধু কথা বলেই সাউন্ড বারকে কন্ট্রোল করতে পারবেন। যেমন, আপনি যদি বলেন "প্লে করুন", তাহলে গান শুরু হয়ে যাবে। এছাড়াও, এই সাউন্ড বারগুলো আপনার স্মার্ট হোমের সাথেও কানেক্ট করা যায়, ফলে আপনি আপনার স্মার্ট ডিভাইসগুলোকেও কন্ট্রোল করতে পারবেন।
৩. সাউন্ড বার কেনার আগে যা যা জানা দরকার
সাউন্ড বার কেনার আগে কিছু জিনিস জেনে রাখা ভালো, যাতে আপনি সঠিক সাউন্ড বারটা বেছে নিতে পারেন।
৩.১ আপনার প্রয়োজন এবং বাজেট
সাউন্ড বার কেনার আগে আপনাকে ঠিক করতে হবে, আপনি কি ধরনের সাউন্ড চান। আপনি যদি সিনেমা দেখতে ভালোবাসেন, তাহলে ডলবি অ্যাটমস সাউন্ড বার আপনার জন্য ভালো হবে। আর যদি গান শোনার জন্য সাউন্ড বার কিনতে চান, তাহলে ভালো বেস (bass) যুক্ত সাউন্ড বার বেছে নিতে পারেন।
আপনার বাজেট কত, সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাজারে কম, মাঝারি ও বেশি দামের সাউন্ড বার পাওয়া যায়। কম দামের মধ্যে ভালো সাউন্ড বার খুঁজে বের করতে একটু রিসার্চ করতে হবে, কিন্তু অসম্ভব নয়।
৩.২ কানেক্টিভিটি (Connectivity) অপশন
কানেক্টিভিটি অপশনগুলো ভালোভাবে দেখে নেওয়া দরকার। HDMI eARC, অপটিক্যাল, ব্লুটুথ, নাকি ওয়াইফাই – এই অপশনগুলোর মধ্যে কোনটা আপনার জন্য দরকারি, সেটা আগে জানতে হবে। আপনার টিভির সাথে কোন কানেকশনটা সবচেয়ে ভালো কাজ করবে, সেটাও দেখতে হবে। পুরোনো টিভির জন্য অপটিক্যাল কানেকশন দরকার হতে পারে।
৩.৩ সাইজ (Size) ও প্লেসমেন্ট (Placement)
আপনার ঘরের সাইজের সাথে মানানসই সাউন্ড বার বেছে নিতে হবে। ছোট ঘরের জন্য ছোট সাউন্ড বার আর বড় ঘরের জন্য বড় সাউন্ড বার ভালো। সাউন্ড বার কোথায় বসালে ভালো সাউন্ড পাওয়া যাবে, সেটাও জানতে হবে। সাধারণত, টিভির নিচে বা উপরে সাউন্ড বার বসালে ভালো সাউন্ড পাওয়া যায়। দেওয়ালে ঝোলানো (Wall mount) সাউন্ড বারও পাওয়া যায়, যা দেখতে বেশ সুন্দর লাগে।
৪. জনপ্রিয় কিছু সাউন্ড বার ব্র্যান্ড এবং মডেল
বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের সাউন্ড বার পাওয়া যায়, তবে কিছু ব্র্যান্ড বেশ জনপ্রিয়। নিচে তাদের কয়েকটা মডেল এবং বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হলো:
৪.১ স্যামসাং (Samsung)
স্যামসাংয়ের সাউন্ড বারগুলো তাদের ডিজাইন ও সাউন্ড কোয়ালিটির জন্য বেশ জনপ্রিয়। তাদের কিছু জনপ্রিয় মডেল হলো:
- Samsung HW-Q950A: এটা ডলবি অ্যাটমস সাপোর্ট করে এবং এর সাউন্ড কোয়ালিটি অসাধারণ।
- Samsung HW-A650: এটা মাঝারি দামের মধ্যে খুব ভালো একটা সাউন্ড বার।
স্যামসাংয়ের সাউন্ড বারগুলো সাধারণত তাদের স্মার্ট ফিচার ও সহজ ব্যবহারের জন্য পরিচিত।
৪.২ জেবিএল (JBL)
জেবিএল সাউন্ড বারের বিশেষত্ব হলো এর শক্তিশালী বেস (bass) এবং পরিষ্কার সাউন্ড। তাদের কিছু জনপ্রিয় মডেল হলো:
- JBL Bar 9.1: এটা ওয়্যারলেস স্পিকারের সাথে আসে, যা আপনাকে সিনেমাহলের মতো সাউন্ড দেয়।
- JBL Bar 5.0 MultiBeam: এটা ছোট আকারের মধ্যে খুব ভালো সাউন্ড দেয়।
জেবিএল সাউন্ড বারগুলো তাদের মজবুত ডিজাইন ও ভালো সাউন্ড কোয়ালিটির জন্য পরিচিত। যারা গান শুনতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য জেবিএল খুব ভালো একটা অপশন।
৪.৩ এলজি (LG)
এলজি সাউন্ড বারের ডিজাইন বেশ আধুনিক এবং এদের স্মার্ট ফিচারগুলোও বেশ কাজের। এলজির কিছু জনপ্রিয় মডেল হলো:
- LG SN11RG: এটা ডলবি অ্যাটমস এবং ডিটিএস:এক্স (DTS:X) সাপোর্ট করে এবং এর সাউন্ড কোয়ালিটি খুবই ভালো।
- LG SN7Y: এটা মাঝারি দামের মধ্যে খুব ভালো একটা সাউন্ড বার।
এলজি সাউন্ড বারগুলো তাদের স্মার্ট ফিচার ও সুন্দর ডিজাইনের জন্য পরিচিত। বিশেষ করে যারা স্মার্ট টিভি ব্যবহার করেন, তাদের জন্য এলজি সাউন্ড বার খুব ভালো একটা পছন্দ হতে পারে।
এখানে একটা টেবিল দেওয়া হলো যেখানে কিছু জনপ্রিয় সাউন্ড বার ব্র্যান্ড এবং তাদের মডেলের দামের তুলনা করা হয়েছে:
ব্র্যান্ড | মডেল | আনুমানিক দাম (BDT) | বিশেষত্ব |
---|---|---|---|
স্যামসাং | HW-Q950A | 90,000 – 1,10,000 | ডলবি অ্যাটমস, অসাধারণ সাউন্ড কোয়ালিটি, স্মার্ট ফিচার |
স্যামসাং | HW-A650 | 35,000 – 45,000 | মাঝারি দাম, ভালো সাউন্ড কোয়ালিটি, সহজ ব্যবহার |
জেবিএল | Bar 9.1 | 80,000 – 95,000 | ওয়্যারলেস স্পিকার, সিনেমাহলের মতো সাউন্ড, শক্তিশালী বেস |
জেবিএল | Bar 5.0 MultiBeam | 40,000 – 50,000 | ছোট আকার, ভালো সাউন্ড কোয়ালিটি, মাল্টিবিম টেকনোলজি |
এলজি | SN11RG | 85,000 – 1,00,000 | ডলবি অ্যাটমস, ডিটিএস:এক্স, স্মার্ট ফিচার, আধুনিক ডিজাইন |
এলজি | SN7Y | 40,000 – 50,000 | মাঝারি দাম, ভালো সাউন্ড কোয়ালিটি, এআই সাউন্ড প্রো |
৫. সাউন্ড বার থেকে সেরা সাউন্ড পাওয়ার উপায়
সাউন্ড বার কিনলেই কিন্তু কাজ শেষ নয়, এর থেকে সেরা সাউন্ড পেতে হলে কিছু জিনিস জানতে হবে।
৫.১ সঠিক প্লেসমেন্ট এবং কানেকশন
সাউন্ড বার কোথায় বসালে সবচেয়ে ভালো সাউন্ড পাওয়া যায়, সেটা জানা খুব জরুরি। সাধারণত, টিভির নিচে বা উপরে সাউন্ড বার বসালে ভালো সাউন্ড পাওয়া যায়। টিভির সাথে কিভাবে কানেক্ট করবেন, সেটাও জানতে হবে। HDMI eARC হলো সবচেয়ে ভালো অপশন, তবে অপটিক্যাল কানেকশনও ব্যবহার করা যেতে পারে। ওয়্যারলেস সাবউফার কোথায় রাখবেন, সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাবউফার সাধারণত ঘরের কোণায় রাখলে ভালো বেস (bass) পাওয়া যায়।
৫.২ সাউন্ড সেটিংস কাস্টমাইজ (Customize) করা
সাউন্ড বারে বিভিন্ন মুড (Movie, Music, Game) থাকে। আপনি যে ধরনের কন্টেন্ট দেখছেন বা শুনছেন, সেই অনুযায়ী মুড সিলেক্ট করলে ভালো সাউন্ড পাওয়া যায়। বেস (Bass) এবং ট্রেবল (Treble) কিভাবে অ্যাডজাস্ট (Adjust) করবেন, সেটাও জানতে হবে। নিজের পছন্দ অনুযায়ী সাউন্ড সেট করতে একটু সময় লাগতে পারে, তবে এটা খুবই জরুরি।
৫.৩ সাউন্ড বারকে আপগ্রেড (Upgrade) করা
ভবিষ্যতে আপনি আপনার সাউন্ড বারকে আরও উন্নত করতে পারেন। ওয়্যারলেস স্পিকার (Wireless speaker) যোগ করে আপনি সাউন্ডকে আরও ছড়িয়ে দিতে পারেন। ডলবি অ্যাটমস স্পিকার সেট করে আপনি সিনেমাহলের মতো সাউন্ড পেতে পারেন। তবে, পুরোনো সাউন্ড বার পরিবর্তন করার সময় কখন আসবে, সেটাও জানতে হবে। যদি আপনার সাউন্ড বার পুরোনো হয়ে যায় বা সাউন্ড কোয়ালিটি খারাপ হয়ে যায়, তাহলে নতুন সাউন্ড বার কেনা ভালো।
উপসংহার
সাউন্ড বার আপনার টিভির সাউন্ড সিস্টেমের জন্য খুবই জরুরি। এটা আপনার মুভি দেখা, গান শোনা এবং গেম খেলার অভিজ্ঞতাকে অনেক বাড়িয়ে দেয়। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক সাউন্ড বার বেছে নিতে একটু সময় লাগতে পারে, তবে এটা খুবই মূল্যবান।
এখনই একটা সাউন্ড বার কিনে আপনার টিভির সাউন্ড কোয়ালিটি উন্নত করুন! আপনার পছন্দের সাউন্ড বার কোনটি? নিচে কমেন্ট করে জানান!