Hit enter after type your search item

প্রিন্টার নির্বাচন ও ব্যবহারের টিপস: ঝামেলা ছাড়াই সেরা প্রিন্ট!

/
/
/
49 Views

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন আপনারা?

আজ আমরা কথা বলব প্রিন্টার নিয়ে। "প্রিন্টার নির্বাচন ও ব্যবহারের টিপস" নিয়ে একটি পরিপূর্ণ গাইডলাইন দেওয়ার চেষ্টা করব, যাতে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক প্রিন্টারটি বেছে নিতে পারেন এবং দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করতে পারেন।

বর্তমান যুগে প্রিন্টার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অফিসের কাজ থেকে শুরু করে বাচ্চাদের স্কুলের প্রোজেক্ট, সবকিছুর জন্যই প্রিন্টারের প্রয়োজন। কিন্তু বাজারে এত রকমের প্রিন্টার পাওয়া যায় যে, কোনটা আপনার জন্য সঠিক, তা বেছে নেওয়া বেশ কঠিন। তাই, আসুন জেনে নেই প্রিন্টার কেনার আগে ও পরে কী কী বিষয় ശ്രദ്ധ রাখতে হবে।

প্রিন্টার কেনার আগে যা জানা জরুরি

প্রিন্টার কেনার আগে কিছু বিষয় বিবেচনা করা দরকার। আপনার বাজেট, কী ধরনের কাজ আপনি প্রিন্টার দিয়ে করতে চান, এবং প্রিন্টারের স্পেসিফিকেশন – এই বিষয়গুলো জানা থাকলে সঠিক প্রিন্টারটি খুঁজে বের করা সহজ হবে।

আপনার প্রয়োজন নির্ধারণ করুন

প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে আপনি কী ধরনের কাজের জন্য প্রিন্টার ব্যবহার করতে চান।

  • সাধারণ ব্যবহার: যদি আপনার শুধু মাঝে মাঝে কিছু ডকুমেন্ট বা ছবি প্রিন্ট করার প্রয়োজন হয়, তাহলে একটি সাধারণ ইঙ্কজেট প্রিন্টারই যথেষ্ট।
  • অফিসের কাজ: অফিসের কাজের জন্য, যেখানে নিয়মিত অনেক ডকুমেন্ট প্রিন্ট করতে হয়, লেজার প্রিন্টার সেরা।
  • ছবি প্রিন্ট: শুধুমাত্র ছবি প্রিন্ট করার জন্য ভালো রেজোলিউশনের কালার ইঙ্কজেট প্রিন্টার প্রয়োজন।

প্রিন্টারের প্রকারভেদ

বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রিন্টার পাওয়া যায়। এদের মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো:

  • ইঙ্কজেট প্রিন্টার: এই প্রিন্টারগুলো তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং ভালো মানের কালার প্রিন্ট দিতে পারে। সাধারণ ব্যবহারের জন্য এটি খুবই উপযোগী।
  • লেজার প্রিন্টার: লেজার প্রিন্টারগুলো দ্রুতগতির এবং অফিসের কাজের জন্য সেরা। এদের প্রিন্টিং খরচও তুলনামূলকভাবে কম।
  • মাল্টিফাংশন প্রিন্টার: এই প্রিন্টারগুলো প্রিন্টিংয়ের পাশাপাশি স্ক্যানিং, কপি এবং ফ্যাক্স করার সুবিধা দেয়। এটি ছোট অফিস বা বাড়ির জন্য খুবই উপযোগী।
  • ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার: এগুলো পুরনো দিনের প্রিন্টার, তবে এখনও কিছু বিশেষ কাজে ব্যবহৃত হয়, যেমন – দোকানের রসিদ ছাপানো।

বাজেট নির্ধারণ

প্রিন্টার কেনার আগে বাজেট ঠিক করা খুব জরুরি। কম দামের প্রিন্টারগুলো সাধারণত সাধারণ ব্যবহারের জন্য ভালো, কিন্তু এদের কার্টিজের দাম বেশি হতে পারে। অন্যদিকে, দামি প্রিন্টারগুলোর প্রিন্টিং খরচ কম হলেও প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি। তাই নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেট নির্ধারণ করুন।

প্রিন্টারের ধরণ আনুমানিক দাম (BDT) সুবিধা অসুবিধা
ইঙ্কজেট প্রিন্টার 5,000 – 15,000 ভালো কালার প্রিন্ট, কম দাম কার্টিজের দাম বেশি, ধীরে প্রিন্ট করে
লেজার প্রিন্টার 8,000 – 25,000 দ্রুতগতি, কম প্রিন্টিং খরচ কালার প্রিন্ট ততটা ভালো নয়, প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি
মাল্টিফাংশন প্রিন্টার 12,000 – 30,000 প্রিন্ট, স্ক্যান, কপি, ফ্যাক্স – সবই করা যায় দাম একটু বেশি, জটিলতা বেশি

প্রিন্ট রেজোলিউশন এবং স্পিড

প্রিন্টারের রেজোলিউশন (DPI – Dots Per Inch) যত বেশি হবে, প্রিন্টের মান তত ভালো হবে। ছবির জন্য অন্তত 600 DPI রেজোলিউশন প্রয়োজন। প্রিন্ট স্পিড (PPM – Pages Per Minute) অফিসের কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

কার্টিজ এবং টোনারের খরচ

প্রিন্টার কেনার সময় কার্টিজ বা টোনারের দাম কেমন, তা জেনে নেওয়া ভালো। কিছু প্রিন্টারের কার্টিজ বা টোনারের দাম প্রিন্টারের দামের কাছাকাছি হতে পারে। তাই, আগে থেকে এই বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

প্রিন্টার ব্যবহারের টিপস

প্রিন্টার কেনার পরেই কিন্তু আপনার কাজ শেষ হয়ে যায় না। প্রিন্টারটিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে এটি দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভালো সার্ভিস দিতে পারবে। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো:

সঠিক স্থানে স্থাপন করুন

প্রিন্টারটিকে এমন জায়গায় রাখুন, যেখানে এটি সরাসরি সূর্যের আলো বা অতিরিক্ত তাপ থেকে দূরে থাকে। এছাড়াও, প্রিন্টারের চারপাশে যথেষ্ট জায়গা রাখা উচিত, যাতে এটি ভালোভাবে কাজ করতে পারে।

নিয়মিত পরিষ্কার করুন

প্রিন্টারটিকে নিয়মিত পরিষ্কার করা প্রয়োজন। ধুলোবালি জমলে প্রিন্টারের বিভিন্ন অংশে সমস্যা হতে পারে। নরম কাপড় দিয়ে বাইরের অংশ এবং প্রিন্টহেড পরিষ্কার করুন।

সঠিক কাগজ ব্যবহার করুন

বিভিন্ন ধরনের কাগজের জন্য প্রিন্টারের সেটিংস ভিন্ন হতে পারে। তাই, যে ধরনের কাগজ ব্যবহার করছেন, সে অনুযায়ী প্রিন্টারের সেটিংস পরিবর্তন করুন।

সফটওয়্যার আপডেট করুন

প্রিন্টারের ড্রাইভার এবং সফটওয়্যার সবসময় আপডেট রাখা উচিত। এতে প্রিন্টারের পারফরম্যান্স ভালো থাকে এবং নতুন ফিচারগুলো ব্যবহার করা যায়।

কার্টিজ এবং টোনার পরিবর্তন

যখন কার্টিজ বা টোনার শেষ হয়ে যায়, তখন তা পরিবর্তন করুন। সবসময় ভালো মানের কার্টিজ বা টোনার ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।

প্রিন্টহেড পরিষ্কার করা

ইঙ্কজেট প্রিন্টারের প্রিন্টহেড প্রায়ই শুকিয়ে যায়, যার কারণে প্রিন্টে সমস্যা হতে পারে। প্রিন্টহেড পরিষ্কার করার জন্য প্রিন্টারের ইউটিলিটি সফটওয়্যার ব্যবহার করুন।

প্রিন্টার সম্পর্কিত কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

এখানে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলো, যা প্রিন্টার ব্যবহার করার সময় আপনার কাজে লাগতে পারে:

প্রিন্টার কি শুধু কম্পিউটার দিয়ে চলে?

এখন অনেক আধুনিক প্রিন্টার Wi-Fi এর মাধ্যমে মোবাইল বা ট্যাবলেট থেকেও প্রিন্ট করতে পারে।

প্রিন্টারের কালি শুকিয়ে গেলে কি করব?

প্রিন্টারের কালি শুকিয়ে গেলে প্রথমে প্রিন্টহেড ক্লিনিং ইউটিলিটি ব্যবহার করুন। যদি এতেও কাজ না হয়, তাহলে কার্টিজ পরিবর্তন করতে হতে পারে।

প্রিন্টারে "পেপার জ্যাম" দেখালে কি করব?

প্রথমে প্রিন্টারটি বন্ধ করুন এবং সাবধানে কাগজটি বের করার চেষ্টা করুন। জোর করে কাগজ টানলে প্রিন্টারের ক্ষতি হতে পারে।

প্রিন্টারের ড্রাইভার কিভাবে ইনস্টল করব?

প্রিন্টারের সাথে দেওয়া সিডি অথবা প্রস্তুতকারকের ওয়েবসাইট থেকে ড্রাইভার ডাউনলোড করে ইনস্টল করতে পারেন।

ওয়্যারলেস প্রিন্টার কিভাবে সেটআপ করব?

ওয়্যারলেস প্রিন্টার সেটআপ করার জন্য প্রিন্টারের কন্ট্রোল প্যানেল থেকে Wi-Fi নেটওয়ার্ক সিলেক্ট করুন এবং পাসওয়ার্ড দিন। এরপর কম্পিউটার বা মোবাইলে প্রিন্টারের ড্রাইভার ইনস্টল করুন।

ডুপ্লেক্স প্রিন্টিং কি?

ডুপ্লেক্স প্রিন্টিং মানে কাগজের দুই দিকেই প্রিন্ট করা। কিছু প্রিন্টারে এই সুবিধাটি অটোমেটিকভাবে থাকে, আবার কিছু প্রিন্টারে ম্যানুয়ালি করতে হয়।

প্রিন্ট করার সময় কালার ঠিক আসছে না কেন?

কালার সেটিংস চেক করুন এবং নিশ্চিত করুন যে সঠিক কালার প্রোফাইল সিলেক্ট করা আছে। এছাড়া, প্রিন্টহেড পরিষ্কার করে দেখতে পারেন।

প্রিন্টারের দাম কেমন?

প্রিন্টারের দাম ৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০,০০০ টাকা বা তার বেশিও হতে পারে, যা নির্ভর করে মডেল এবং ফিচারের ওপর।

কোন প্রিন্টারটি আমার জন্য ভালো হবে?

আপনার প্রয়োজন এবং বাজেটের ওপর নির্ভর করে। সাধারণ ব্যবহারের জন্য ইঙ্কজেট, অফিসের জন্য লেজার এবং ছবি প্রিন্ট করার জন্য ভালো কালার রেজোলিউশনের ইঙ্কজেট প্রিন্টার ভালো।

প্রিন্টারের কালি কতদিন পর্যন্ত থাকে?

কালির মেয়াদ প্রিন্ট ব্যবহারের ধরনের ওপর নির্ভর করে, তবে সাধারণত একটি কার্টিজ কয়েক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত চলতে পারে।

প্রিন্টার কেনার সময় কি কি দেখা উচিত?

প্রিন্ট স্পিড, রেজোলিউশন, কার্টিজের দাম এবং প্রিন্টারের অতিরিক্ত ফিচারগুলো (যেমন Wi-Fi, ডুপ্লেক্স প্রিন্টিং) দেখে নেওয়া উচিত।

প্রিন্টার ব্যবহারের সুবিধা কি?

প্রিন্টার ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি যেকোনো ডকুমেন্ট বা ছবি দ্রুত প্রিন্ট করতে পারেন, যা আপনার কাজকে আরও সহজ করে।

প্রিন্টারের অসুবিধা কি?

প্রিন্টারের প্রধান অসুবিধা হলো এর কালি বা টোনারের খরচ এবং মাঝে মাঝে প্রিন্ট সংক্রান্ত সমস্যা, যেমন পেপার জ্যাম।

প্রিন্টার কিভাবে পরিষ্কার করব?

প্রিন্টার বন্ধ করে নরম, শুকনো কাপড় দিয়ে বাইরের অংশ পরিষ্কার করুন। ভেতরের অংশের জন্য সার্ভিস ম্যানুয়াল অনুসরণ করুন অথবা সার্ভিস সেন্টারে যোগাযোগ করুন।

প্রিন্টার কেনার আগে ব্র্যান্ড গুরুত্বপূর্ণ কেন?

ভালো ব্র্যান্ডের প্রিন্টার সাধারণত ভালো সার্ভিস এবং টেকসই হয়। এদের কাস্টমার সাপোর্টও ভালো থাকে।

প্রিন্টারের ওয়ারেন্টি কিভাবে পাব?

প্রিন্টার কেনার সময় ওয়ারেন্টি কার্ড সংগ্রহ করুন এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ওয়ারেন্টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

শেষ কথা

আশা করি, "প্রিন্টার নির্বাচন ও ব্যবহারের টিপস" নিয়ে এই ব্লগ পোস্টটি আপনাদের জন্য সহায়ক হবে। সঠিক প্রিন্টার নির্বাচন এবং এর সঠিক ব্যবহার আপনার কাজকে আরও সহজ ও সুন্দর করে তুলবে। যদি আপনার কোন প্রশ্ন থাকে, তবে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভ কামনা!

Facebook Comments Box
This div height required for enabling the sticky sidebar