কবি সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম ও প্রকৃত নাম
বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে বহু খ্যাতিমান কবি ও সাহিত্যিক তাঁদের ছদ্মনাম বা কলম নাম ব্যবহার করেছেন। এই নামগুলো কখনো তাঁদের সৃজনশীলতার পরিচয় বহন করেছে, আবার কখনো বিভিন্ন সামাজিক বা ব্যক্তিগত কারণে এই নামগুলো গ্রহণ করেছেন। ছদ্মনাম শুধু একটি নাম নয়, এটি একধরনের সৃজনশীল অভিব্যক্তি যা তাঁদের সাহিত্যকর্মে বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে। আসুন, বাংলা সাহিত্যের কিছু অমর কবি ও সাহিত্যিক এবং তাঁদের ছদ্মনামের দুনিয়া ঘুরে দেখা যাক।
ছদ্মনামের গুরুত্ব
ছদ্মনাম ব্যবহার করার পেছনে কবি-সাহিত্যিকদের নানান উদ্দেশ্য ছিল। কিছু ছদ্মনাম ছিল শুধুই মজার জন্য, আবার কিছু ছিল গভীর চিন্তা-ভাবনার ফল। যেমন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কমলাকান্ত নামটি তাঁর সাহিত্যকর্মের এক ভিন্ন স্বাদ প্রকাশ করে। আবার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অনিলা দেবী ছদ্মনামে নারীকেন্দ্রিক সাহিত্য রচনা করেছেন। ছদ্মনামের মাধ্যমে লেখকেরা কখনো নিজেকে আড়াল করেছেন, কখনো পাঠকের কাছে নতুন পরিচয় তুলে ধরেছেন।
কবি-সাহিত্যিক ছদ্মনাম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অনিলা দেবী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভানু সিংহ/আন্নাকালি পাকড়াশী কাজী নজরুল ইসলাম ধুমকেতু/ব্যাঙাচি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কমলাকান্ত সুকুমার রায় তাতা সুবোধ ঘোষ কালপুরুষ/সুপান্থ প্রেমেন্দ্র মিত্র কৃত্তিবাস বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ক্বচিৎ প্রৌঢ় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নীললোহিত বিমল ঘোষ মৌমাছি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় হাবু শর্মা কালীপ্রসন্ন সিংহ হুতোম পেঁচা মধুসূদন দত্ত টিমোথি পেনপোয়েম অখিল নিয়োগী স্বপন বুড়ো প্রমথ চৌধুরী বীরবল সমরেশ বসু কালকূট/ভ্রমর প্রভাত কিরণ বসু কাকাবাবু রাজশেখর বসু পরশুরাম দেবব্রত মল্লিক ভীষ্মদেব নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সুনন্দ বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায় বনফুল নিহাররঞ্জন গুপ্ত বানভট্ট প্যারীচাঁদ মিত্র টেকচাঁদ ঠাকুর দেবেশ রায় বেদুইন বিনয় ঘোষ কালপেঁচা চারুচন্দ্র চক্রবর্তী জরাসন্ধ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র বিরূপাক্ষ বিনয় মুখোপাধ্যায় যাযাবর সৈয়দ মুজতবা আলী সত্যপীর আশুতোষ মুখোপাধ্যায় শ্রীবাস নিখিল সরকার শ্রীপান্থ অন্নদাশঙ্কর রায় লীলাময় রায় শক্তি চট্টোপাধ্যায় রূপচাঁদ পক্ষী প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় রাধারানী দেবী ললিত মুখোপাধ্যায় বিজ্ঞান ভিক্ষু অশোক গুপ্ত বিক্রমাদিত্য বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য্য বাণীকুমার সুভাষ মুখোপাধ্যায় পদাতিক/ঢোল গোবিন্দ শক্তিপদ রাজগুরু পঞ্চমুখ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত নবকুমার/কিংশুক অচিন্তকুমার সেনগুপ্ত নীহারিকা দেবী দীপেন্দ্র সান্যাল নীলকন্ঠ সুধীরকুমার রায় দেবদত্ত রায় শরৎচন্দ্র পন্ডিত দাদাঠাকুর শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় চন্দ্রহাঁস ভবানী সেনগুপ্ত চানক্য সেন সতীনাথ ভাদুড়ি চিত্রগুপ্ত কিন্নর রায় শ্বেত কৃষ্ণ বিমল কর বিদুর মতি নন্দী কালকেতু জীবনানন্দ দাশ শ্রী নাদাপেটা হাঁদারাম বিহারীলাল চট্টোপাধ্যায় মোহিতলাল মজুমদার সত্য সুন্দর দাস মধুসূদন মজুমদার দৃষ্টিহীন প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশ্বেতা দেবী সুমিত্রা দেবী গৌরকিশোর ঘোষ রূপদর্শী শম্ভু মিত্র শ্রী সঞ্জীব সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় অমিতাভ অমৃতলাল বন্দ্যোপাধ্যায় অমিয়া দেবী পরিমল গোস্বামী এককলমী প্রাণতোষ ঘটক উদয় ভানু রাম বসু কনিস্ক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় গৌড় মল্লার মনমোহন ঘোষ চিত্ত গুপ্ত সুজিত নাগ দিলদার ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় পাঁচু ঠাকুর শৈলেশ দে বহুরূপী প্রেমাঙ্কুর আতর্থী মহাস্থবির দিনেশ গঙ্গোপাধ্যায় শ্রীভট্ট সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বীরভদ্র তারাপদ রায় গ্রন্থকীট বিমল মিত্র জাবালী রাজা রামমোহন রায় শিবপ্রসাদ রায়
কবি-সাহিত্যিকদের ছদ্মনাম তাদের সৃজনশীলতার এক অদ্ভুত দিক উন্মোচন করে। এই নামগুলো তাঁদের সাহিত্যকর্মকে আরও আকর্ষণীয় করেছে। পাঠকদের কাছে এটি কৌতূহলের বিষয় ছিল, আর সাহিত্যিকদের জন্য এটি ছিল তাঁদের সৃজনশীলতার আরেকটি মঞ্চ।
ছদ্মনামের এই সংস্কৃতি আজও প্রাসঙ্গিক এবং সৃজনশীল ব্যক্তিদের অনুপ্রেরণা জোগায়। তাই বাংলা সাহিত্যকে ভালোভাবে বুঝতে হলে ছদ্মনামের জগৎকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। এটি আমাদের সাহিত্যিক ঐতিহ্যের এক অমূল্য অংশ।